সোমবার, ২০ মে ২০২৪, ০৩:০৮ পূর্বাহ্ন

২০ শিক্ষার্থীকে ব্ল্যাকমেইল করে ৪ বছর ধর্ষণ করছে দুই শিক্ষক

২০ শিক্ষার্থীকে ব্ল্যাকমেইল করে ৪ বছর ধর্ষণ করছে দুই শিক্ষক

নিজস্ব প্রতিবেদক: নারায়ণগঞ্জ মহানগরের সিদ্ধিরগঞ্জে একটি বেসরকারি স্কুলের ২০ শিক্ষার্থীকে আপত্তিকর ছবি তুলে ব্ল্যাকমেইল করে বছরের পর বছর ধরে ধর্ষণের অভিযোগে গণপিটুনির শিকার হয়েছেন দুই শিক্ষক। গতকাল বৃহস্পতিবার মহানগরের ২ নম্বর ওয়ার্ডের মিজমিজি কান্দাপাড়া মাদরাসা রোড এলাকায় ‘অক্সফোর্ড কিন্ডারগার্টেন’ নামে এক স্কুলে এই ঘটনা ঘটেছে। পরে র‌্যাব ও পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে তাঁদের গ্রেপ্তার করেছে।

গ্রেপ্তার শিক্ষকরা হলেন মাদারীপুর জেলা সদরের শিলখাড়া এলাকার সিরাজুল ইসলাম সরকারের ছেলে আরিফুল ইসলাম সরকার ওরফে আশরাফুল (৩০) ও ফরিদপুর কোতোয়ালি থানার বাকচর এলাকার মৃত শহিদুল্লা শেখের ছেলে রফিকুল ইসলাম ওরফে জুলফিকার (৫৫)। তাঁদের মধ্যে জুলফিকার ওই স্কুলের প্রতিষ্ঠাতা ও প্রধান শিক্ষক এবং আশরাফুল সহকারী শিক্ষক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল লাম্পট্যের স্বীকারোক্তি দিয়েছেন।

এলাকাবাসী জানায়, ২০০৩ সালে একই এলাকার বাড়ি ভাড়া করে ছোট আকারে ‘অক্সফোর্ড কিন্ডারগার্টেন’ নামে স্কুলটি প্রতিষ্ঠা করেন জুলফিকার। পরে স্কুলের লাভের টাকা দিয়ে বর্তমান স্কুলের জমিসহ চারতলা ভবনটি কিনে নেন তিনি। আর আশরাফুল এই স্কুলে আট বছর ধরে গণিত ও ইংরেজি বিষয়ে শিক্ষকতা করছেন। স্কুলে শিক্ষকতার পাশাপাশি ছাত্রীদের কোচিং করানোর জন্য তিনি নিজের বাসা ছাড়াও স্কুলের পাশে বুকস গার্ডেন এলাকায় একটি ফ্ল্যাট ভাড়া নেন। স্ত্রী-সন্তান না থাকলেও ওই ফ্ল্যাটে তিনটি বিছানা রয়েছে। দীর্ঘ চার বছর ধরে তিনি কোচিং ব্যবসার আড়ালে পরীক্ষার খাতায় বেশি নম্বর দেওয়া এবং লেখাপড়ায় বাড়তি সহায়তার মতো নানা প্রলোভন দেখিয়ে ২০ জনের অধিক ছাত্রীকে ফাঁদে ফেলেন। একপর্যায়ে তাদের আপত্তিকর ছবি তুলে তা ফাঁস করে দেওয়ার ভয় দেখিয়ে ব্ল্যাকমেইল করে ওই সব ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণ করেন। লোকলজ্জার ভয়ে ছাত্রীরা এসব নির্যাতনের ঘটনা প্রকাশ করেনি।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে চলা শিক্ষক আশরাফুলের এসব অনৈতিক কর্মকাণ্ড প্রকাশিত হয়ে পড়লে গতকাল সকাল ১১টার দিকে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী ওই স্কুলে যায়। এ সময় আশরাফুল তাঁর মোবাইল ফোনসেটে থাকা ছাত্রীদের আপত্তিকর ছবিগুলো তড়িঘড়ি ডিলিট করে ফেলেন। পরে স্থানীয় লোকজন ফোনসেটটি মোবাইল ফোনের দোকানে নিয়ে সফটওয়্যারের মাধ্যমে ছবিগুলো উদ্ধার করে। ছবিগুলো দেখে বিক্ষুব্ধ এলাকাবাসী শিক্ষক আশরাফুল ও রফিকুল ইসলামকে পিটুনি দেয়।

খবর পেয়ে র‌্যাব-১১-এর সহকারী পরিচালক ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার আলেপ উদ্দিন বিপিএম ফোর্স নিয়ে ওই স্কুলে যান। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মীর শাহীন শাহ পারভেজ, উপপরিদর্শক সাঈদ ও হাফিজুর রহমানও ঘটনাস্থলে আসেন। পরে ওই দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করা হয়। একই সঙ্গে তাঁদের মোবাইল ফোনসেট, ল্যাপটপ ও ক্যামেরা জব্দ করা হয়। এ সময় ওই দুই শিক্ষকের ফাঁসির দাবিতে র‌্যাব ও পুলিশের সামনেই স্লোগান দেয় বিক্ষুব্ধ অভিভাবক ও এলাকাবাসী।

এলাকাবাসী জানায়, সহকারী শিক্ষক আশরাফুলকে সহযোগিতা করতেন স্কুলের প্রধান শিক্ষক জুলফিকার। তিন মাস আগে স্কুলের এক শিক্ষিকাকেও আশরাফুল যৌন হয়রানি করেন। তিনি এ ব্যাপারে সিদ্ধিরগঞ্জ থানায় অভিযোগ দিলে পুলিশ আশরাফুলকে থানায় নিয়ে যায়। সে সময় প্রধান শিক্ষক আশরাফুলকে ছাড়িয়ে আনেন।

এক অভিভাবক ক্ষোভে ফুঁসতে ফুঁসতে বলেন, ‘চার বছর আগে পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ার সময় আমার মেয়েকে যৌন হয়রানি করে লম্পট শিক্ষক আশরাফুল। এখন নবম শ্রেণিতে এসেও আমার মেয়ে ওই লম্পটের লালসার শিকার হয়েছে।’

একই এলাকার বাসিন্দা সিদ্ধিরগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক হাজি ইয়াছিন মিয়া স্কুলটি বন্ধ করে দেওয়ার দাবি তুলে বলেন, ‘খবর পেয়েছি যে ওই শিক্ষক এক মেয়েকে ব্ল্যাকমেইল করে তার মাকেও ধর্ষণ করেছে।’

র‌্যাব-১১-এর সহকারী পরিচালক আলেপ উদ্দিন গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিদ্ধিরগঞ্জের অক্সফোর্ড স্কুলের এক শিক্ষক বিভিন্ন ছাত্রীকে যৌন হেনস্তা করেছে—এমন খবরের ভিত্তিতে আমরা সকালের দিকে স্কুলে এসে অভিযুক্ত দুই শিক্ষককে গ্রেপ্তার করি। একই সঙ্গে জব্দ করা হয় তাদের মোবাইল ফোন ও ল্যাপটপ। শিক্ষক আশরাফুলের মোবাইল ফোন ও বিভিন্ন ডিভাইসে ২০ জনেরও বেশি ছাত্রীর সঙ্গে নানা কৌশল করে ধর্ষণের চিত্র ও ডকুমেন্ট পাওয়া যায়।’ র‌্যাবের এই কর্মকর্তা বলেন, প্রধান শিক্ষক জুলফিকার অপকর্ম চালিয়ে যেতে আশরাফুলকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করেছেন বলে প্রমাণ মিলেছে। এ জন্য তাঁকেও গ্রেপ্তার করা হয়েছে। আর প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আশরাফুল ২০ ছাত্রীকে যৌন হয়রানি ও ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছেন।

আলেপ উদ্দিন আরো বলেন, ‘ওই শিক্ষকরা গ্রেপ্তার হওয়ার পর অভিভাবকরা মুখ খুলতে শুরু করেছেন। তাঁরা এদের বিরুদ্ধে কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন। ভিকটিমদের পরিবার থেকে এখন পর্যন্ত কোনো লিখিত অভিযোগ পাওয়া যায়নি। র‌্যাব স্বতঃপ্রণোদিত হয়েই তদন্ত কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। পরে ভুক্তভোগী পরিবারগুলোকে ডাকা হবে। তারা মামলা করলে সে অনুযায়ী কার্যক্রম চলবে। অন্যথায় সাইবার অ্যাক্ট অনুযায়ী অপরাধের বিচারের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিদ্ধিরগঞ্জ থানার ওসি মীর শাহীন শাহ পারভেজ গতকাল সন্ধ্যায় বলেন, ‘এ বিষয়ে মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে। এই ঘটনার সঙ্গে আরো কেউ জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।’

ভালো লাগলে নিউজটি শেয়ার করুন

© All rights reserved © 2011 VisionBangla24.Com
Desing & Developed BY ThemesBazar.Com